ঢাকা , রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫ , ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি ব্রাহ্মণপাড়ায় এক বছরে বিষপানে ২২৮ জন আত্মহত্যার চেষ্টা।


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১৭ ০০:২১:৩৮
আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি ব্রাহ্মণপাড়ায় এক বছরে বিষপানে ২২৮ জন আত্মহত্যার চেষ্টা। আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি ব্রাহ্মণপাড়ায় এক বছরে বিষপানে ২২৮ জন আত্মহত্যার চেষ্টা।

মোঃ অপু খান চৌধুরী। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় একবছরে কীটনাশক ও কেড়ির ট্যাবলেট পানকরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ২২৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ আগষ্ট) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিসংখ্যানবিদ মাহমুদুল হাসান সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রেম ভালোবাসা, পারিবারিক কলহ, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক দুশ্চিন্তা ও স্বজনদের সঙ্গে অভিমান করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কীটনাশক ও কেড়ির ট্যাবলেট খেয়ে গত বছরের আগষ্ট থেকে চলতি ২০২৫ সালের ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নিয়েছে ২২৮ জন নারীপুরুষ। আগত এসব রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা।

এ ছাড়াও আত্মহত্যার চেষ্টায় চলতি বছরের জানুয়ারি - ২৫ থেকে আগষ্ট পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে, ২২ জনের থানা সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। বেসরকারি হিসেবে তা তিন থেকে চার গুণ হবে বলে জানায় স্থানীয়রা।

সচেতন মহল জানান, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতা কারণে মুদি দোকানে দীর্ঘদিন যাবত বিক্রি হচ্ছে কীটনাশক। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নারী-পুরুষ ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার সাধারণ জনগণ। এছাড়াও কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

উল্লেখিত সময়ের মধ্যে উপজেলায় ২২ জন আত্মহত্যা করেছেন, সরকারী হিসেবের বাহিরেও আত্মহত্যা পরিমান তিনগুণ থেকে চারগুণ হবে বলে জানান এলাকাবাসী। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বেশির ভাগই তরুণী আত্মহত্যা করেন তাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর।

পরিবারের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। উপজেলায় সবকয়টি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন যাবত কীটনাশকের দোকানগুলোতে রেজিস্ট্রেশন বিহীন তরুণ -তরুণী, গৃহবধূ, ছাত্র -ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছে কীটনাশক। সহজলভ্য হওয়ায় তারা বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন লোক জানান, বাজারে অনেক মুদি দোকানে কীটনাশক বিক্রি করার অনুমতি না থাকলেও তারা দীর্ঘ দিন যাবত ক্ষমতা দেখিয়ে এসব কীটনাশক বিক্রি করে থাকেন। ফলে তরুণ তরুণীদের কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় কীটনাশক ক্রয় করে এবং তা পান করে আত্মহত্যার করে।

জানতে চাইলে সহকারী এটার্নি জেনারেল এডভোকেট নুরুল হুদা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ফসল উৎপাদনে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য কীটনাশক অপরিহার্য। তবে কীটনাশকের অযথা বা অবৈধ ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও কৃষির জন্য ক্ষতিকর। এজন্য বাংলাদেশ সরকার কীটনাশক আইন, ২০১৮ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কারা কীটনাশক

আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারবে। সাধারণ দোকানদার বা ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় কীটনাশক বিক্রি করতে পারে না। বিক্রির জন্য অবশ্যই কর্তৃক প্রদত্ত ডিলার রিটেইলার লাইসেন্স প্রয়োজন। এই লাইসেন্সধারী ডিলাররাই অনুমোদিত কোম্পানির কাছ থেকে কীটনাশক সংগ্রহ করে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে পারেন।

লাইসেন্স ছাড়া কীটনাশক বিক্রি করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল বা এমনকি কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া নকল বা অবৈধ কীটনাশক বিক্রির ক্ষেত্রেও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, যত্রতত্র এবং লাইসেন্সবিহীন ভাবে কীটনাশক বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছি। এছাড়া কীটনাশক বিক্রেতাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে কীটনাশক বিক্রির একটা সুনির্দিষ্ট রেজিস্ট্রার অনুসরণ করার জন্য যেখানে কৃষকের তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

এছাড়া, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, শিশু,অপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কাছে কীটনাশক বিক্রি না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা সবসময় কৃষকদের কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে আসছি।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ মোহাম্মদ হাসিবুর রেজা বলেন, কীটনাশক ডিলাররা সতর্কতার সহিত তা যথাযথ কৃষকের কাছে বিক্রি করতে হবে। প্রেম, ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের কারণে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাদেরকে সামাজিকভাবে বুঝিয়ে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

ব্রাহ্মণপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতিটি মানুষকে ধর্মীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হবে এবং সবার প্রতি সভায় সহনশীল আচরণ করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া কখনো সমচীন নয়। এটা হচ্ছে মানুষের মানসিক সমস্যা। তাদেরকে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে সফলতার চেষ্টা করতে হবে।

ব্রাহ্মণপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) টমাস বড়ুয়া বলেন, ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে এ ধরণের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। প্রতিটি মসজিদে খুতবার পূর্বে এ বিষয়ে মানুষের কাছে ইসলামিক রীতিনীতি তুলে ধরবেন এবং মহিলাদেরকে বিভিন সেমিনারের মাধ্যমে আত্মহত্যার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান বলেন, এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক বন্ধন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক বন্ধন সুদৃর হলে হলে তাদেরকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। 

আত্মহত্যা কখনো সমাধান নয়। এছাড়া যে সকল অনুমোদনহীন দোকানে এ ধরনের কীটনাশক বিক্রি করে উপজেলা প্রশাসন তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।


 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ